ফুজি (জাপান)

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর পর্বতের তালিকায় প্রথমেই আসে জাপানের ফুজি পর্বত। প্রায় নিখুঁত শঙ্কু-আকৃতির এই পর্বতটি জাপানের অন্যতম জাতীয় প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধুমাত্র একটি পর্বতই নয়, বরং একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি, যা “সংবেদনশীল নিদ্রা”-এর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। শেষবার এতে ১৭০৭ সালে অগ্নুৎপাত হয়েছিল, তবে এটি আবার যেকোনো সময় সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ মানুষ এই পর্বতজয় করেন। বছরে দুই মাস ফুজিতে তুষার থাকে না, তাই বরফঢাকা চূড়া দেখতে চাইলে বসন্ত বা শরৎকালেই ভ্রমণ করাই শ্রেয়। তখন সাকুরা ফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যেরও দেখা মেলে। এই পর্বতের চূড়ায় আছে একটি মন্দির, পোস্ট অফিস ও আবহাওয়া কেন্দ্র। ফুজি পর্বতের আশেপাশের অঞ্চল জাপানের জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থার অংশ। ফুজি পর্বত ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকার অন্তর্ভুক্ত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা সংরক্ষিত।

বাংগল বাংগল (অস্ট্রেলিয়া)

বাংগল বাংগল একটি চমৎকার সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্বতশ্রেণী, যেখানে একের পর এক শঙ্কু-আকৃতির পাহাড় রয়েছে। কালো, কমলা ও সাদা স্তরযুক্ত বালুকাপাথরের গঠন এই পর্বতমালাকে দেখতে মৌচাকের মতো লাগে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ক্ষয়প্রক্রিয়ার ফলে এদের বর্তমান রূপ তৈরি হয়েছে। যেহেতু বালুকাপাথর ভঙ্গুর, তাই এখানে পর্বতারোহণ নিষিদ্ধ। এই পর্বতশ্রেণীর উৎপত্তি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—২০ মিলিয়ন বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় একটি উল্কাপিণ্ড আঘাত হানে এবং এর ফলে বালুকাপাথরের স্তর উঁচু হয়ে ওঠে। এরপর জলপ্রবাহের প্রভাবে তৈরি হয় এই অনন্য গঠন। বর্তমানে বাংগল বাংগল একটি সংরক্ষিত অঞ্চল এবং জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভুক্ত।

টেবিল মাউন্টেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকার টেবিল মাউন্টেন এটির অদ্ভুত গঠনের জন্য বিখ্যাত। এর ভিত্তি সাধারণ হলেও চূড়াটি মনে হয় যেন কেটে নেওয়া হয়েছে—সম্পূর্ণ সমতল একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়ে শেষ হয় এটি। কিংবদন্তি অনুযায়ী, এই গঠন থেকেই কেপ টাউনের নামকরণ হয়েছে। পর্বতটির উপরে কেবল কারে উঠে পৌঁছানো যায়। এই পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখা যায় কেপ টাউনের অসাধারণ দৃশ্য, যা আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সংযোগস্থল হিসেবে পরিচিত।

মোয়ারোয়া (ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া)

ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার আগ্নেয়গিরিভিত্তিক দ্বীপের একটি পর্বত হচ্ছে মোয়ারোয়া। এর উচ্চতা ৭৬১ মিটার এবং এটি প্রায় খাড়া। শুধুমাত্র অভিজ্ঞ পর্বতারোহীরাই এই চূড়া জয় করার সাহস দেখাতে পারেন। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের অন্যান্য পর্বতের মতো এরও আগ্নেয়গিরিভিত্তিক উৎস রয়েছে। পাহাড়টির গায়ে ঘন গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনাঞ্চল চূড়ার কাছাকাছি পর্যন্ত বিস্তৃত। এর ব্যতিক্রমী গঠন এমন যে ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার অনেক স্থান থেকেই এটি দেখা যায়।

রেইনবো মাউন্টেনস (চীন)

রেইনবো মাউন্টেনস নামটি এসেছে এই পর্বতের বিচিত্র বর্ণের স্তর থেকে—বিভিন্ন খনিজ উপাদান মিশে বালুকাপাথরের ওপর গড়ে উঠেছে লাল, হলুদ, সাদা, সোনালি, নীল, ও সবুজ রঙের স্তর। এই উজ্জ্বল ও বিপরীতধর্মী রঙগুলো একে প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি বানিয়েছে। এটি চীনের ড্যানশিয়া ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল পার্কের অন্তর্ভুক্ত এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। যদিও এটির উচ্চতা মাত্র ৩০০–৪০০ মিটার, তবে এই রঙিন সৌন্দর্যই একে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করে তুলেছে।

ফেইরি চিমনিস (তুরস্ক)

তুরস্কের কাপাডোসিয়া অঞ্চলের ফেয়ারি চিমনিস পর্বতশ্রেণী ভলকানিক বিস্ফোরণের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। এই অঞ্চল এখন নানা রকম মাশরুম-আকৃতির ও চিমনি সদৃশ গঠনে পূর্ণ। তাই, এই পর্বতশ্রেণীকে 'ফেইরি চিমনি' বলে ডাকা হয়। পরবর্তীতে এই এলাকায় সন্ন্যাসীরা বাস করতে শুরু করেন এবং পাহাড়ের মধ্যে গুহা তৈরি করে বসবাস করেন। তুরস্কের ফেয়ারি চিমনিস অত্যন্ত সরু ও সূক্ষ্ম, যদিও অনুরূপ গঠন ফ্রান্স, সার্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা যায়। এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত ও আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত।

কিনাবালু (মালয়েশিয়া)

কিনাবালু পর্বত একটি চওড়া মালভূমির ওপর প্রায় খাড়া চূড়ার কারণে ব্যতিক্রমী। এর চূড়া ৪,০৯৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট, কিন্তু এখানে বরফ প্রায় জমা হয় না বললেই চলে এবং সারাবছরই সবুজে আচ্ছাদিত থাকে। এখানকার বিস্তৃত মালভূমি ও চিরসবুজ অরণ্যে বাস করে নানা বিরল প্রাণী ও উদ্ভিদ, যেমন—অরচিড, ওরাংওটাং, এবং ৩০০ প্রজাতির পাখি। ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি পৃথিবীর নবীনতম পর্বতগুলোর একটি, এবং প্রতিবছর এর চূড়া প্রায় ৫ মিলিমিটার করে উঁচু হচ্ছে।