আসন্ন সপ্তাহে প্রবল অস্থিরতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সপ্তাহের শুরুতেই, সোমবার এশিয়ান সেশনের প্রথম দিকেই EUR/USD পেয়ারের ট্রেডাররা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উরসুলা ভন ডার লাইয়েনের আলোচনার ফলাফল মূল্যায়ন করে ট্রেডিং শুরু করবে। এই ভূরাজনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি, অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইভেন্ট রয়েছে — যার মধ্যে নন-ফার্ম পেরোল, ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি, ISM উৎপাদন সূচক, মার্কিন জিডিপি এবং কোর PCE সূচক সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, সেইসাথে ফেডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। নিঃসন্দেহে, এটি জুলাইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহ হতে যাচ্ছে।
সোমবার
সোমবারের অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে কার্যত তেমন কিছু নেই। শুধুমাত্র দুটি প্রতিবেদন প্রকাশনা নির্ধারিত আছে — ডালাস ফেড ম্যানুফ্যাকচারিং বিজনেস ইনডেক্স এবং চীনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রফিট সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। এগুলো গুরুত্বের দিক থেকে গৌণ প্রতিবেদন, যা ট্রেডাররা সম্ভবত উপেক্ষা করবে।
তবুও, EUR/USD পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতা বিরাজ করছে, কারণ ট্রেডাররা স্কটল্যান্ডের থর্নবেরিতে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনার ফলাফলের প্রতিক্রিয়া জানাবে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ট্রাম্প–ভন ডার লাইয়েন বৈঠক চলছে, ফলে এর ফলাফলের বিষয়ে কেবল অনুমানই করা যায়। ট্রাম্পের মতে, চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা "50/50", আর ব্লুমবার্গ সূত্র জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনুকূল নয় (বা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশি অনুকূল) এমন একটি বাণিজ্য চুক্তি মেনেও 30% শুল্ক এড়াতে প্রস্তুত। তবে, ফিনানশিয়াল টাইমস জানায়, উভয় পক্ষ এখনও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি — উভয় পক্ষের আলোচনা শনিবার (২৬ জুলাই) রাত পর্যন্ত গড়িয়েছে এবং তা "বিতর্কপূর্ণ" ছিল। পলিটিকোর সূত্র অনুযায়ী, প্রস্তাবিত আপসের শর্তগুলো "ট্রাম্প ও ইউরোপীয় দেশগুলো উভয়ের কাছেই অগ্রহণযোগ্য"। ব্রাসেলসের অনেক কর্মকর্তা আর আশা করছেন না যে স্কটল্যান্ডের এই বৈঠক পহেলা আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি রোধ করতে পারবে।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে চুক্তি হয়, তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের চাহিদার ভিত্তিতে ইউরোর মূল্য শক্তিশালীভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
মঙ্গলবার
মঙ্গলবার মার্কিন ট্রেডিং সেশনে গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। প্রথমেই প্রকাশিত হবে JOLTs কর্মসংস্থানের শূন্যপদ সংক্রান্ত প্রতিবেদন— এটি তুলনামূলকভাবে আগের পরিস্থিতি তুলে ধরে, যা মাসের শেষে খালি পদগুলোর পরিমাণ তুলে ধরে। এই প্রতিবেদনের ফলাফলের প্রভাবে মার্কেটে বড় মুভমেন্ট সৃষ্টি হবে না, তবে বিদ্যমান প্রবণতা নিশ্চিত বা খণ্ডন করলে তা EUR/USD পেয়ারের প্রভাব ফেলতে পারে। পূর্ববর্তী দুই মাসে খালি পদের সংখ্যা বেড়েছে, যেখানে মে মাসে তা 7.77 মিলিয়নে পৌঁছেছিল। জুনে শূন্যপদের সংখ্যা 7.49 মিলিয়নে নামার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। যদি হঠাৎ করে বড় ধস দেখা যায়, তবে তা ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া মঙ্গলবার কনফারেন্স বোর্ডের কনজিউমার কনফিডেন্স ইনডেক্স বা ভোক্তা আস্থা সূচক প্রকাশিত হবে। মে মাসে 98.4-এ পৌঁছানোর পর, এটি জুনে কমে দাঁড়ায় 93.0-এ। পূর্বাভাস অনুযায়ী জুলাইয়ে সূচকটি 95.9-এ ফিরে আসবে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দিকনির্দেশনা — যদি ভোক্তা আস্থা পুনরায় অপ্রত্যাশিত হারে কমে যায়, তবে তা ডলারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।
বুধবার
এ সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ইভেন্ট-ভিত্তিক দিন হচ্ছে বুধবার।
প্রথমেই প্রকাশিত হবে ADP কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন, যা প্রায়শই অফিসিয়াল কর্মসংস্থান পরিসংখ্যানের পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও এটির ফলাফল সবসময় নন-ফার্ম পেরোলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না, তবুও যদি প্রত্যাশার নিচে ফলাফল আসে, তাহলে তা EUR/USD পেয়ারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। জুলাই মাসে মার্কিন বেসরকারি খাতে মাত্র 82,000 কর্মসংস্থান হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে — যা তুলনামূলকভাবে দুর্বল একটি ফলাফল। যদি প্রতিবেদনে কর্মসংস্থানের সংখ্যা 100K অতিক্রম করে, তাহলে তা ডলারকে সমর্থন দিতে পারে।
এরপর প্রকাশিত হবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে মার্কিন জিডিপির প্রাথমিক অনুমান। প্রথম প্রান্তিকে 0.5% সংকোচনের পর এবার 2.4% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে এই ধসের পেছনে মূল কারণ ছিল এপ্রিল মাসে শুল্ক কার্যকরের আগে আমদানির পরিমাণ 41% বৃদ্ধি পেয়েছে — যা ফলাফলকে পরস্পরবিরোধী করে ফেলেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদনে মার্কিন অর্থনীতির অধিক নির্ভরযোগ্য চিত্র প্রতিফলিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদি 2.4% প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হয়, তাহলে ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধার এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষণ হিসেবে ডলারের দর বৃদ্ধি পাবে।
সবশেষে, বুধবার রাতে ফেডের জুলাইয়ের বৈঠকের ফলাফল প্রকাশিত হবে। একদিকে, এটি একটি "নিরপেক্ষ" বৈঠক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে — যেখানে সকল মুদ্রানীতি অপরিবর্তিত থাকবে (যদিও গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার জুলাইয়ে সুদের হার কমানোর পক্ষে ছিলেন)। অন্যদিকে, ভবিষ্যতের নীতিমালার নমনীয়করণ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা মার্কেটে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, এবং জুলাইয়ের বিবৃতি EUR/USD পেয়ারের মূল্যের তীব্র অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। CME ফেডওয়াচ টুল অনুসারে, সেপ্টেম্বর মাসে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বর্তমানে 60%, যা মাসের শুরুতে প্রায় নিশ্চিতভাবে ঘটবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। এই পরিবর্তনের কারণ হলো জুনের ননফার্ম পেরোলের শক্তিশালী ফলাফল, সামগ্রিক ভোক্তা মূল্য সূচকের বৃদ্ধি এবং মূল ভোক্তা মূল্য সূচক অপরিবর্তিত ছিল। তবে মূল ও সামগ্রিক উৎপাদন মূল্য সূচক বা PPI-এর ধীরগতি এবং শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা এখনও চাপ সৃষ্টি করছে। ফেড তাদের বার্তা যেভাবে উপস্থাপন করবে, মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা তা ডোভিশ অথবা নিরপেক্ষ/হকিশ হিসেবে মূল্যায়ন করবে — যা সরাসরি EUR/USD পেয়ারের মূল্যের মুভমেন্টে প্রতিফলিত হবে।
বৃহস্পতিবার
বৃহস্পতিবার এশিয়ান সেশনে চীনে গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, যা পরোক্ষভাবে EUR/USD পেয়ারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। চীনের ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন সংক্রান্ত PMI গত দুই মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে, যা জুনে 49.7-এ পৌঁছেছে। জুলাইয়ে এ মাত্রা ধরে রাখার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। যদি এটি অপ্রত্যাশিতভাবে 50-এর উপরে উঠে (যা সম্প্রসারণ নির্দেশ করে), তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের চাহিদা বাড়তে পারে, যা ইউরোর পক্ষে কাজ করবে।
নন-ম্যানুফ্যাকচারিং বা অনুৎপাদনশীল PMI-এর ফলাফলও সম্প্রসারণ অঞ্চলে থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, তবে তা সামান্য কমে 50.3-এ নামতে পারে (আগে ছিল 50.5)। এখানেও মূল বিষয় হলো — সূচকটি 50 পয়েন্টের উপরে থাকে কি না।
ইউরোপীয় সেশনে জার্মানির মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। বিশ্লেষকরা আশা করছেন, দেশটির সামগ্রিক CPI বার্ষিক ভিত্তিতে 1.9%-এ নেমে আসবে (পূর্বে ছিল 2.0%), এবং সমন্বয়কৃত সূচক 2.0%-এ অপরিবর্তিত থাকবে।
মার্কিন সেশনে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নির্ধারণে ফেডের পছন্দের সূচক — কোর PCE সূচক প্রকাশিত হবে। বিশ্লেষকরা আশা করছেন, জুনে এটি বার্ষিক ভিত্তিতে 2.8%-এ উন্নীত হবে। যদি সূচকটি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত বেড়ে যায় (যেমন মে মাসে 2.6% থেকে 2.7% হয়েছিল), তাহলে তা সূচকটিতে সম্ভাব্য ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সংকেত দেবে। এরকম ফলাফল ডলারকে সমর্থন দেবে এবং সেপ্টেম্বর বৈঠকে ফেডের "অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ" কৌশলকে আরও দৃঢ় করবে।
শুক্রবার
সপ্তাহের শেষ দিনেও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। ইউরোপীয় সেশনে ইউরোজোনের জুলাই মাসের ভোক্তা মূল্য সূচক বা CPI-এর ফ্ল্যাশ অনুমান প্রকাশিত হবে। এখানে মিশ্র ফলাফল দেখা যেতে পারে — সামগ্রিক CPI বার্ষিক ভিত্তিতে 1.9%-এ নেমে আসতে পারে (পূর্বে ছিল 2.0%), তবে মূল্য ভোক্তা মূল্য সূচক 2.3%-এ স্থির থাকতে পারে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ বৈঠকে ক্রিস্টিন লাগার্ডে সেপ্টেম্বর মাসে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। যদি মূল্যস্ফীতির হার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে হকিশ বা কঠোর অবস্থান গ্রহণের সম্ভাবনা পুনরায় বেড়ে যেতে পারে, এবং ইউরো সমর্থন পেতে পারে।
মার্কিন সেশনে জুন মাসের ননফার্ম পেরোল সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। বেকারত্বের হার 4.2%-এ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে — যা মার্চ থেকে মে পর্যন্ত টানা তিন মাস একই ছিল, কিন্তু জুনে সূচকটি 4.1%-এ কমে আসে।
কর্মসংস্থানের সংখ্যা বৃদ্ধির দিক থেকে, পূর্বাভাস অনুযায়ী মে মাসের 147,000-এর তুলনায় জুনে মাত্র 108,000 কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। ডলার ক্রেতারা নিবিড়ভাবে লক্ষ্য রাখবে যাতে ফলাফল মনস্তাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ 100K স্তরের নিচে না নামে। তবে প্রাথমিক জবলেস ক্লেইমস — যা একটি তুলনামূলকভাবে হালানাগাদ সূচক — টানা ছয় সপ্তাহ ধরে কমেছে, যা ইঙ্গিত করে যে ননফার্ম পেরোলের সংখ্যা পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এছাড়া শুক্রবার জুন মাসে ISM ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন সূচক প্রকাশিত হবে— এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক সূচক যা টানা চার মাস ধরে পতনের পর জুনে অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে 49.0-এ পৌঁছায়। জুলাইয়ে সূচকটি আরও বেড়ে 49.5-এ পৌঁছানোর পূর্বাভাস রয়েছে। যদি সূচকটি আশানুরূপভাবে 50-এর ওপরে উঠে (সম্প্রসারণ সূচক), তাহলে ডলার শক্তিশালী সমর্থন পেতে পারে।
উপসংহার
গত সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় 1.1730–1.1780 রেঞ্জের মধ্যে EUR/USD পেয়ারের ট্রেডিং হয়েছে, যেখানে এই পেয়ারের মূল্য রেঞ্জের সীমানায় থাকা অবস্থায় ট্রেডাররা মুনাফা গ্রহণ করেছে। আসন্ন সপ্তাহে যেকোনো দিকে মুভমেন্ট দেখা যেতে পারে — প্রশ্ন একটাই, কোন দিকে?
যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছায়, মার্কিন জিডিপির ফলাফল হতাশাজনক হয়, এবং ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের ফলাফল শ্রমবাজারে অস্থিতিশীলতা নির্দেশ করে — তাহলে ক্রেতারা EUR/USD পেয়ারের মূল্যকে 1.18+ দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং এমনকি মূল্য বার্ষিক (প্রায় ৪ বছর) উচ্চতা 1.1830-এ পৌঁছে যেতে পারে। অন্যথায়, বিক্রেতারা নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নিয়ে নিয়ে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1580–1.1690 এরিয়ায় নামিয়ে আনতে পারে — যা D1 চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডের মধ্য ও ঊর্ধ্বসীমার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।