"চোখে জল নিয়ে উদযাপন"—সম্ভবত এই বাক্যটিই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ইউরোপের প্রতিক্রিয়াকে সবচেয়ে ভালোভাবে প্রকাশ করে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইয়েনের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে—চুক্তিটির খুব কম অংশই প্রশংসা পেয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন যে ইউরোপ "অন্ধকার সময় পার করছে, যেখানে ইউরোপের মুক্ত জনগণ আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিয়েছে।" ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি চুক্তিটিকে সতর্কভাবে মূল্যায়ন করেছেন, জানিয়েছেন যে এখন তিনি আশা করছেন ব্রাসেলস ১৫% শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর পাশে দাঁড়াবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বাণিজ্য কমিটির চেয়ারম্যান বের্ন্ড ল্যাঙ্গে বলেছেন, ইইউকে "বেদনাদায়ক ছাড়" দিতে হয়েছে এবং তিনি এই চুক্তি নিয়ে "একদমই উচ্ছ্বসিত নন।"
এমনকি ভন ডার লেইয়েনের নিজ দলের সদস্যরাও চুক্তিটির পক্ষে অবস্থান নেননি। ইউরোপীয় পিপলস পার্টির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ১৫% শুল্ক "ন্যায্য বাণিজ্য নীতির একটি জঘন্য লঙ্ঘন এবং ইউরোপীয় পণ্যের প্রতিযোগিতামূলকতায় বড় আঘাত।"
সারা ইউরোপের ব্যবসায়ীরাও চুক্তিটির সমালোচনা করেছেন। জার্মান শিল্প নেতারা একে "অসম্পূর্ণ আপস" বলে উল্লেখ করেছেন। জার্মান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিয়নের সদস্যরা বলেছেন, একমাত্র ইতিবাচক দিক হচ্ছে ইউরোপ আরও বেশি শুল্কযুদ্ধ এড়াতে পেরেছে। জার্মান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেডারেশন, এবং আইএফও ইনস্টিটিউটের বক্তব্যও ছিল একইরকম।
স্বাভাবিকভাবেই এর প্রতিক্রিয়ায় EUR/USD পেয়ারের দরপতন ঘটেছে। মার্কেটে ট্রেডিং শুরু হওয়ার পর মাত্র ১৫ পয়েন্ট বৃদ্ধির পর, এই পেয়ারের মূল্য প্রায় ২০০ পয়েন্ট হ্রাস পায়।
এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে—এটি কি শুধুই কারেকশন, নাকি একটি পরিপূর্ণ প্রবণতা পরিবর্তনের সূচনা?
প্রথমত, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এটিই EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের জন্য সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে প্রথম "সঙ্কট" নয়। আমরা যদি W1 টাইমফ্রেম দেখি, তাহলে দেখা যাচ্ছে, জুলাইয়ের শুরুতে এই পেয়ার প্রায় টানা দুই সপ্তাহ ধরে দরপতনের শিকার হয়েছিল, সেসময় এই পেয়ারের মূল্য 1.1830 (চার বছরের উচ্চতা) থেকে 1.1558 পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল। সেই সময় অনেক বিশ্লেষকই "প্রবণতা পরিবর্তনের প্রাথমিক ইঙ্গিত" নিয়ে কথা বলেছিলেন—যদিও পরবর্তী সপ্তাহেই ক্রেতারা প্রায় পুরো দরপতন পুনরুদ্ধার করে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ২৩০ পয়েন্টের দরপতন পুষিয়ে নেয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, যা ট্রেডারদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতেতে পারে। একইসাথে, ফেডারেল রিজার্ভের জুলাইয়ের বৈঠকও আসন্ন, যার ফলাফল বুধবার প্রকাশিত হবে।
এই সব মৌলিক উপাদান মার্কিন ডলারের মূল্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যদি প্রতিবেদনগুলোর ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল হয় এবং ফেড বিনিয়োগকারীদের অনুমানের চেয়ে আরও নমনীয় অবস্থান নেয়, তাহলে মার্কিন ডলার চাপের মধ্যে পড়বে এবং EUR/USD পেয়ারের মূল্য আবার আগের লেভেলে ফিরে যেতে পারে।
এই সপ্তাহের মূল প্রতিবেদনগুলো হল:
- মার্কিন শ্রমবাজার সংক্রান্ত প্রতিবেদন (JOLTs, ADP, ননফার্ম পেরোল),
- মূল্যস্ফীতির সূচক (কোর PCE সূচক, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজ্যুমার সেন্টিমেন্ট ও মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা সূচক),
- অন্যান্য সামষ্টিক প্রতিবেদন (জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কনফারেন্স বোর্ড ভোক্তা আস্থা সূচক, ISM ম্যানুফ্যাকচারিং ইনডেক্স)।
প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী শ্রমবাজার দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে—বেকারত্ব 4.2%-এ পৌঁছাতে পারে এবং মাত্র 108,000 কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেতে পারে।
একইসাথে, মার্কিন অর্থনীতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখাতে পারে, যেখানে দেশটির জিডিপি 2.4%-এ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে (প্রথম প্রান্তিকে 0.5% হ্রাস পেয়েছিল)। কনফারেন্স বোর্ডের কনজ্যুমার কনফিডেন্স ইনডেক্স বা ভোক্তা আস্থা সূচক 95.9-এ উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোর PCE মূল্যসূচক জুনে বার্ষিক ভিত্তিতে 2.8%-এ উন্নীত হওয়ার অনুমান করা হয়েছে (পূর্বে ছিল 2.7%)।
দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ পূর্বাভাসই শক্তিশালী—অর্থাৎ মার্কেটে দুর্বল ফলাফলের প্রত্যাশা খুব একটা মূল্যায়িত হয়নি। সেক্ষেত্রে, যদি মূল প্রতিবেদনগুলোর ফলাফল দুর্বল হয় (অর্থাৎ রেড জোনে থাকে), তবে ডলার ব্যাপক চাপের মুখে পড়তে পারে। পাশাপাশি, ফেড জুলাইয়ের বৈঠকে সেপ্টেম্বর মাসে সুদের হার কমানোর ব্যাপারে "সবুজ সংকেত" দিতে পারে, যা এখনো মূল পূর্বাভাস নয় (CME ফেডওয়াচ অনুসারে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুদের হার বর্তমান স্তরে ধরে রাখার সম্ভাবনা প্রায় 40%)।
সারসংক্ষেপে, EUR/USD পেয়ারের মূল্যের শক্তিশালী বিয়ারিশ মোমেন্টাম বজায় থাকা সত্ত্বেও এখনই প্রবণতা পরিবর্তনের পূর্ণাংগ ঘোষণা দেয়া যায় না। আগের কারেকশন 1.1830 থেকে শুরু হয়ে 1.1558-এ শেষ হয়েছিল, এটি মনে রাখা জরুরি।
তবে এই মুহূর্তে EUR/USD পেয়ারের লং পজিশন ওপেন করা উপযুক্ত নয়, কারণ ট্রেডাররা এখনো পুরোপুরি মৌলিক প্রেক্ষাপটকে মূল্যায়ন করেনি। পর্যবেক্ষণের জন্য মূল লেভেল হলো 1.1560 (দৈনিক চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডের নিম্নসীমা)। যদি বিক্রেতারা এই পেয়ারের মূল্যের এই লেভেলের ব্রেক ঘটায়, তাহলে পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1480 (D1-এ কুমো ক্লাউডের ঊর্ধ্বসীমা)। অন্যদিকে, যদি 1.1560-এর আশেপাশে নিম্নমুখী মোমেন্টাম থেমে যায়, তবে আবারও লং পজিশন ওপেন করার পক্ষে যৌক্তিকতা থাকবে, যেখানে প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা থাকবে 1.1640 এবং 1.1670 (D1-এ কিজুন-সেন ও টেনকান-সেন লাইন)।